প্রথম পাতা প্রবন্ধ একটি আবেদন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম

একটি আবেদন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম

38 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

ইদানিং সোস্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একটা প্রচার বিভিন্ন মন্তব্যসহ দেখা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে,যার কেন্দ্রে রয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলাম।

দেখা যাচ্ছে,একটা সংখ্যক মানুষ মনে করছেন রবীন্দ্রনাথ বাঙালি মুসলমানদের এক অংশের কাছে গ্রহনযোগ্য নন,আবার কাজী নজরুল ইসলামের স্থান বাঙালি হিন্দুদের কাছে তেমন শ্রদ্ধার নয়।

অত্যন্ত নিম্নমানের এই ধারনা বা ভাবনার প্রকাশ এবং গণমাধ্যমে প্রচার করা সত্যি নিন্দনীয়। অবশ্য,এই ধরনের মানসিকতার প্রকাশ বা পরিচয় অতীতেও হয়েছে বিভিন্নভাবে।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন — “বাঙালি হিন্দুর ছেলে যদি তাহার প্রতিবেশী মুসলমানদের শাস্ত্র ও ইতিহাস এবং মুলমানদের ছেলে তাহার প্রতিবেশী হিন্দুদের শাস্ত্র ও ইতিহাস অধিকৃতভাবে না জানে তবে সেই অসম্পূর্ণ শিক্ষার দ্বারা তাহারা কেহই আপন জীবনের কর্তব্য ভালো করিয়া পালন করিতে পারিবে না। “

এই ভাবনার মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশ যারা পরিচালনা করেছেন,তাঁরা আদপেই কখনো কোন চিন্তা ভাবনা করেন নি।যার ফলে এদেশের স্বাধীনতার সময়ে সেই দ্বিজাতিতত্ত্ব নামক একটি “দোহাই” দিয়ে অখন্ড ভারতবর্ষকে দু’টুকরো করে ফেলা হোল। তারপরে হিন্দু মুসলমান এই সাম্প্রদায়িক বিষ বিভিন্নধরনের কাজে কর্মে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের আকার ধারণ করতে লাগল। যা বোধহয় আজও বিদ্যমান।

কিন্তু আমরা যদি আমাদের অবিভক্ত এই বাঙলার ইতিহাস সংস্কৃতি জানতে চেষ্টা করি তাহলে আমরা দেখতে পাবো যে আমাদের এই বাঙালী জাতির(হিন্দু মুসলমান সহ) জন্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলাম সহ সকল তথাকথিত হিন্দু মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন লেখায়,এবং সংস্কৃতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের পরম্পরাগত সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে।আর বাস্তবে হিন্দু মুসলমান সাধারণ মানুষ একে অন্যের প্রতি যথেষ্ট সহনশীল,বন্ধুত্বপূর্ণ, সহযোগিতামূলক।যা আমরা আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পেয়ে থাকি। যা আমরা পেয়েছি রবীন্দ্রনাথ -নজরলের কাছ থেকে।

আধুনিক কালের এক গানের কথায় আমরা পাই..”সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনাতে নজরুল,/ যতই আসুক বিঘ্ন বিপদ বাধা হোক প্রতিকুল,/একহাতে বাজে অগ্নিবীণা,কন্ঠে গীতাঞ্জলি,/…আমরা যে পথ চলি।”

আসলে আমাদের বুকের ডান দিকে যদি বাস করেন কাজী নজরুল ইসলাম, তবে বুকের বাম দিকে অবশ্যই বাস করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

ইদানীং এপার ওপার বাংলায় একশ্রেণীর মৌলবাদীদের প্রচারে রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা,নজরুল ইসলামের বিরোধিতা প্রকট হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে।যা কিন্তু অনভিপ্রেত। যা কিন্তু আমাদের প্রতিবাদের বিষয়।

রবীন্দ্রনাথ এবং কাজী নজরুল হিন্দু বাঙালী এবং মুসলিম বাঙালী উভয়ের অতি আদরের জিনিস। এই সত্যকে কেউ কেউ আজ মিথ্যা প্রমানিত করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে,যা কিন্তু মোটেই সঠিক নয়। বরং বলা যায় তাদের চিহ্নিত করে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা উচিত। সেটাই এই সময়ের দাবী।

আসুন আমাদের শুভ চেতনায় আমরা ঋদ্ধ হই,সম্মৃদ্ধ হই।আমাদের রবীন্দ্রনাথ, আমাদের নজরুল, বিশ্বমানবতার এক মূর্ত প্রতীক, আমাদের গৌরব,আমাদের অনুভব,আমাদের সম্পদ বৈভব। আধুনিক কালের একটি প্রাসঙ্গিক লেখায় পাই,–

“বললো সেদিন তারিনী খুড়ো,/’ কতকগুলো সব ধেড়ে বুড়ো,/ বাংলা যখন ভাগ করলি,/ ঠিক করে ভাগ কর্।’// আবার বললো তারিণী খুড়ো,/’ পাচ্ছিনা খুঁজে ল্যাজা-মুড়ো,/ যা বলছি হক্ কথা রে,/ যতই তোরা রাগ কর্।”//

“ভাগ হয়নি তো মায়ের ভাষা,/ ভাগ হয়নি সুখদুখের আশা,/ ভাগ হয়নি পয়লা বোশেখ/ বারো মাসের তেরো পাবন,/ ২৫ শে বৈশাখ, ১১ ই জ্যৈষ্ঠ,/ ভাগ হয়নি তো ২২শে শ্রাবণ,/ ইছামতীর একুল ওকুল,/ ভাগ হয়নি তো পান্তা ভাত,/ ভাগ হয়নি তো কাজী নজরুল, / হয়নি তো ভাগ রবীন্দ্রনাথ।” (বিবস্বান)

আসুন আমরা সতর্ক থাকি। কোনও ষড়যন্ত্র যেন আমাদের রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের চেতনাকে, ভালোবাসাকে, ঐতিহাসিক ঐক্যের ঐতিহ্যকে আঘাত না করতে পারে। এটাই হোক আজকের দিনের আন্তরিক অঙ্গীকার।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.