প্রথম পাতা খেলা ক্রীড়া নৈপুণ্য, দক্ষতা ও ফুটবলবোধের জন্য বিশ্ব মারাদোনাকে মনে রাখবে

ক্রীড়া নৈপুণ্য, দক্ষতা ও ফুটবলবোধের জন্য বিশ্ব মারাদোনাকে মনে রাখবে

244 views
A+A-
Reset

সাধনা দাস বসু : বিশ্ব ফুটবলে নক্ষত্র পতন । চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা । গত ২৫শে নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি । বয়েস হয়েছিল ষাট বছর । এর আগে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল তাঁর ।

পুরো নাম আর্মান্দো দিয়েগো মারাদোনা । যাঁর পায়ের জাদুতে মুগ্ধ গোটা দুনিয়া । পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির ছোটখাটো চেহারার এই খেলোয়াড়টির স্কিল ও ক্ষিপ্রতা তাঁকে সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের অন্যতমর শিরোপা এনে দিয়েছে ।

১৯৬০ সালের ৩০শে অক্টোবর আর্জেন্তিনার বুয়েনোস আইরেসে মারাদোনা জন্মগ্ৰহন করেন । ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রতিভা প্রকাশ পায়। নজরে পড়েন প্রশিক্ষক ফ্রান্সিসকো কর্ণেজোর । সুযোগ মেলে আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সে । সেই শুরু । মাঝমাঠের আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়টিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি । তাঁর নেতৃত্বে টানা ১৩৬টি ম্যাচে অপরাজিত থাকে সেই দল । ১৯৭৬ সালে আর্জেন্তিনার শীর্ষ পর্যায়ের লিগে অভিষেক হয় মারাদোনার । টানা তিন বছর লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন । ১৯৮১তে যোগ দেন বোকা জুনিয়র্সে । পরের বছর পাড়ি দেন ইউরোপে । যোগ দেন বার্সেলোনায় । এরপর নাপোলি এবং সেভিয়াতেও  খেলেছেন । ১৯৮২ থেকে টানা এগারো বছর মারাদোনা ইউরোপে খেলেছিলেন । তাঁর দেখানো পথ ধরেই লাতিন আমেরিকার ফুটবলাররা ইউরোপে খেলতে আসেন। ১৯৭৯ , ৮৭ ও ৮৯ – তিনটি কোপা আমেরিকায় অংশ নিয়েছিলেন । ১৯৮২ থেকে টানা চার বার আর্জেন্তিনার জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিশ্বকাপ ফুটবলে । তাঁর নেতৃত্বে আর্জেন্তিনা ১৯৮৬তে বিশ্বকাপ জয় করে । মারাদোনা গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন । ৮৬ র বিশ্বকাপেই কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্তিনা ২- ১ গোলে জয়ী হয় । সেই ম্যাচে  মারাদোনার করা দুটি গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে । প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল , যা ” হ্যান্ড অফ গড ” নামে খ্যাত । দ্বিতীয় গোলটি তিনি করেছিলেন ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে , ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের পাঁচ জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে । ২০০২ সালে এই গোলটি ফুটবল প্রেমীদের ভোটে শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ।

১৯৯১ সালে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে নতুনরূপে জীবন শুরু করেন । তেক্সতিল মান্দিয়ুতে ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন । এরপর রেসিং ক্লাবসহ আরো কয়েকটি ক্লাবে কাজ করেন ।

২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত  আর্জেন্তিনার জাতীয় দলের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন মারাদোনা। তাঁর প্রশিক্ষণে আর্জেন্তিনা ২০১০ এ ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায় । ২০১৯ থেকে আমৃত্যু তিনি লা প্লাতার ম্যানেজার ছিলেন ।

ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে মারাদোনাকে আর্জেন্তিনার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ডায়মন্ড কোনেক্স পুরস্কার দেওয়া হয় । ২০০০ সালে ভোটের মাধ্যমে মারাদোনা , পেলের সঙ্গে যৌথভাবে ফিফা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের শিরোপা অর্জন করেন ।

২০০০ সালেই মারাদোনা তাঁর আত্মজীবনী ‘ ইয়ো সো এল দিয়েগো ‘ ( আমি দিয়েগো ) প্রকাশ করেন । বইটি আর্জেন্তিনার সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে স্বীকৃত হয় ।

এ হেন কিংবদন্তি ফুটবলারকে ব্যক্তিগত জীবনে বহু সংগ্ৰামের সম্মুখীন হতে হয়েছিল । একটা সময় মাদকাসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন । তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চিকিৎসা করান । আর এই মাদক থেকেই তিনি স্থূলত্ব রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ।

মারাদোনার  অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য , দক্ষতা ও ফুটবলবোধের জন্য এই বিশ্ব তাঁকে মনে রাখবে । সেই কারণেই তাঁর মৃত্যুতে আর্জেন্তিনা সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে । আর সেই কারণেই অতিমারীকে উপেক্ষা করে মারাদোনার শেষযাত্রায় সমবেত হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ । চোখের জলে তারা বিদায় জানায় ফুটবলের রাজপুত্রকে ।

ছবি সৌজন্যে : নিউ ইর্য়ক টাইমস

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.